বহু বছর ধরে বিশ্বে ইসলামবিদ্বেষ ও মু’সলিম নি’র্যাতন বেড়েছে। সম্প্রতি শান্তিপ্রিয় দেশ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে নামাজরত মু’সলমানও রক্ষা পায়নি ইসলামবিদ্বেষীর হাত থেকে।
মু’সলমানদের সম্প’র্কে নানা বিরুপ মন্তব্য ও অ’পপ্রচারে ব্যস্ত কতিপয় ইসলামবিদ্বেষী। পরিবার থেকে ইসলাম ও মু’সলমানদের বি’ষয়ে নানা ভীতিকর কথা জেনে বড় হয়েছেন ড্রিউ বিনস্কি নামের এক ইহুদি।
তবে শখ ও পেশাগত কারণে তিনি ভ্রমণ করেছেন বিশ্বের ১৫০টিরও অধিক দেশ। তার মধ্যে প্রায় ৪০টি রয়েছে মু’সলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ।
আর এসব দেশে ভ্রমণ করে তার শৈশবে মু’সলমানদের বি’ষয় শোনা তার সব ভীতিকর বক্তব্যকে ঠুনকো, মিথ্যা আর অ’পপ্রচার বলে মনে হয়েছে।
ড্রিউ বিনস্কি মূ’লত একজন গলফার। ১৯টি দেশে তিনি গলফ খেলেছেন। তিনি এসেছেন ভারতেও। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও কাটিয়েছেন অনেকটা সময়। আর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তার গমনাগমন রয়েছে নিয়মিত।
ভ্রমণ তার নে’শা ও পেশা। এসব দেশে দেশে ঘুরে তিনি ভিডিও তৈরি করেন, ব্লগ লেখেন। সেই ড্রিউ বিনস্কি ৪০টি মু’সলিমপ্রধান দেশ ভ্রমণ করার পর তৈরি করেছেন এমন একটি ভিডিও যেখানে তিনি জানিয়েছেন,
সত্যিকারের ইসলাম কী? মু’সলমানরা কেমন আর মু’সলিম সংস্কৃতির কোন বি’ষয়গুলো তার প্রচণ্ডরকম ভালো লেগেছে।
তার সোশ্যাল মিডিয়া পেজ ড্রিউ বিনস্কিতে পোস্ট করা ভিডিওটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ইতিমধ্যে ৫৭ লক্ষবারের বেশি দেখা হয়ে গেছে ভিডিওটি।
ভিডিওতে তাকে বলতে দেখা গেছে, ইসলাম পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম যার অনুসারীর সংখ্যা ১.৬ বিলিয়ন। আমি এতোগুলো দেশ ভ্রমণের পর মু’সলিম সংস্কৃতিকে ভালবেসে ফে’লেছি।
তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই ইসলাম সম্প’র্কে ভীতিকর মন্তব্য শুনে শুনে বড় হয়েছি৷ আমাকে অনেকেই মু’সলমানদের এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিত। আমাকে বলা হতো, মু’সলমানরা খা’রাপ লোক। স’ন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে এরা জ’ড়িত।
তবে আমি যতই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মু’সলমানদের স’ঙ্গে মিশতে শুরু করেছি ততই অভিভূত হয়েছি। ততই মু’সলমান সংস্কৃতির প্রেমে পড়েছি।
ভিডিও’র এক পর্যায়ে তিনি জানান মু’সলিম সংস্কৃতির কোন কোন বি’ষয়ের প্রতি তিনি অনুর’ক্ত-
১। বিনস্কি তার ভ্রমণ অ’ভিজ্ঞতার আলোকে দেখেছেন, মু’সলমানেরা ভীষণ পরিবারকেন্দ্রিক। পাশ্চাত্য দেশগুলোতে যেখানে পারিবারিক বন্ধ’নগুলো ঠুনকো সেখানে মু’সলমানদের মধ্যে পরিবারপ্রীতি তুলনামূ’লক অনেক বেশি।
তিনি বলেন, মু’সলমানরা তাদের বাবা, মা এমনি দাদা দাদীর সাথেও মধুর সম্প’র্ক রক্ষা করে। তাদের দেখভাল করে, দায়িত্ব পালন করে। অথচ মু’সলমানদের এই পারিবারিক বন্ধ’ন অমু’সলিম দেশগুলোতে অনুপস্থিতই বলা চলে।
২। কোনো মু’সলমানের স’ঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর মু’সলমানরা তাকে “ভাই” বলে ডেকেছে।
এ যেন একেবারে আত্মীয়তার মতো একটা ঘনিষ্ঠ সম্প’র্ক। এর পর অনেকেই তার ও’পর শান্তি কামনার জন্য বিধাতার কাছে প্রার্থণাও করেছে। এ বি’ষয়টি বিনস্কিকে পূলকিত করেছে।
৩। মসজিদের বৈচিত্র্যময়তা এবং সৌন্দর্য একজন ইহুদি বিনস্কিকে ভীষণ মুগ্ধ করেছে ।
তিনি বিভিন্ন দেশের মসজিদের স্থাপত্যশৈলী দেখেছেন। বিনস্কি সব দেশের মসজিদকে মনযোগ দিয়ে লক্ষ্য করেছেন।
বিনক্সি বলেন, মসজিদের ভে’তরের নিরবতা আমার মনের মধ্যে অদ্ভুত একধরণের প্রশান্তি দিয়েছে। বি’ষয়টিকে ঐশ্বরিক বলেই মনে করেন তিনি।
৪। মু’সলমানরা মেঝে বসে খাবার গ্রহণ করে এবং সবাই একস’ঙ্গে খায়। বিভিন্ন মু’সলিমপ্রধান দেশে এই সংস্কৃতি আছে।
পাশাপাশি মু’সলমানরা বেশিরভাগ সময়ই হাত দিয়ে খাবার খায়।
মু’সলিমরা খাবারগুলো একটি বিশাল থালায় নিয়ে সবাই এই থালা থেকে খাবার খায়। এই ব্যাপারগুলো অতীব চমৎকার। হাত দিয়ে খাবার খেলে খাবারের স’ঙ্গে একটা আত্মিক যোগাযোগ তৈরি হয়।
৫। মু’সলমানদের চা খাওয়ার ঐতিহ্যকেও তিনি উল্লেখ করেছেন তার প্রিয় সংস্কৃতি হিসেবে।
তিনি বলেন, আমি দেখেছি প্রায় সব মু’সলিমপ্রধান দেশে চা খাওয়ার একটা আলাদা রীতি আছে। আলাদা হলেও চায়ের প্রতি আবেগটা সব দেশের মানুষেরই একরকম। গরম গরম চা খাওয়ার জন্য যে আয়োজন সেই ব্যাপারটাই বিনস্কিকে মুগ্ধ করেছে।
৬। সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বি’ষয়টি শেষে উল্লেখ করেছেন বিনস্কি। বহিঃবিশ্বে মু’সলিম’দের জ’ঙ্গি, স’ন্ত্রাসী বলে প্রচার করা হচ্ছে । তবে একজন ইহুদী বিনস্কির মতে, আর সব সম্প্রদায় থেকে মু’সলমানদের আতিথেয়তার দিক অনেক এগিয়ে।
তিনি বলেন, কতবার যে মু’সলমানদের বাড়িতে চা, কফি ও বিভিন্ন ভোজে যেতে নিমন্ত্রন পেয়েছি ও খেয়েছি তার হিসাব করে বলা সম্ভব নয়। এমন চরিত্রের মানুষগুলো কখনই জ’ঙ্গি মতাদর্শের হতে পারে না।
ড্রিউ বিনস্কি যুক্তি দিয়েছেন, পৃথিবীর চারভাগের একভাগ জনসংখ্যা মু’সলমান। আর মু’সলমানেরা এমন আ’তঙ্কবা’দী হয়ে থাকলে বিশ্বের কোনো দেশেই মানুষ টিকে থাকতে পারত না।
এখনও ১১টি মু’সলিম দেশ ভ্রমণ বাকি আছে জানিয়ে ড্রিউ বিনস্কি বলেন, যারা বলে মু’সলমানরা স’ন্ত্রাস, হা’নাহানি আর জ’ঙ্গিবাদে জ’ড়িত তাদের কথা একদমই প্রোপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুই নয়।
মু’সলমানদের বি’ষয়ে যারা অ’পপ্রচারে লি’প্ত তাদেরকে মু’সলিম দেশগুলোতে ভ্রমণের আহ্বান জানান ড্রিউ বিনস্কি।