হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আমির প্রয়াত শাহ আহম’দ শফীর মৃ’ত্যু নিয়ে সংগঠনটির বর্তমান আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী মি’থ্যাচার করছেন বলে অ’ভিযোগ করেছেন আল্লামা শফীর শ্যালক মোহাম্ম’দ মাঈন উদ্দীন।
আজ শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।
মাঈন উদ্দীন বিভিন্ন সময় নিজেকে ‘হেফাজতের কেউ নন’ দাবি করলেও আজকের সংবাদ সম্মেলন ছিল হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ব্যানারে।
মাঈন উদ্দীন বলেন, ‘গত ২৩ ডিসেম্বর হাটহাজারী মাদরাসায় আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ও তার সহযোগীরা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বাবুনগরীর মতো বয়োবৃ’দ্ধ আলেম সংবাদ সম্মেলনে মি’থ্যাচার করছেন।’
তিনি বলেন, ‘গত ১৬ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী মাদরাসায় কী ঘটেছিল তা আপনারা সবাই জানেন।
কওমী ভিশনের মাধ্যমে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী মাদরাসায় অবস্থান করে সকল ঘ’টনা লাইভ প্রচার করেছেন। আপনারা দেখেছেন শহীদ আল্লামা শফী হুজুরের রুমে কীভাবে ভা’ঙচুর চা’লানো হয়েছে।
মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির, মীর ঈদ্রিস, মাওলানা শহীদুল্লাহ, মাওলানা ইনামুল হাসান, মাওলানা জুনায়েদ (হ’ত্যা মা’মলার আ’সামি) উপস্থিত থেকে শফী হুজুরকে জো’রপূর্বক হাটহাজারী মাদরাসা থেকে পদত্যাগে বা’ধ্য করেন।’
বাবুনগরীর হস্তক্ষেপে জামায়াত-শিবির আল্লামা শফীর জানাজায় অংশ নেয় বলেও দাবি করেন আল্লামা শফীর শ্যালক।
তিনি বলেন, ‘বাবুনগরীর সরাসরি হস্তক্ষেপে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্র শিবির, বিএনপি, নি’ষিদ্ধ ঘোষিত হুজি, হিযবুত তাহরীরসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা জানাজায় পরিকল্পিতভাবে অবস্থান নেয়।’
আল্লামা শফীর ছেলে ইউসুফ মাদানীকে অ’স্ত্রের ভ’য় দেখিয়ে জানাজায় অংশ নিতে বা’ধ্য করা হয় দাবি করে তিনি আরও বলেন, ‘আমার ভাগিনা ইউসুফ মাদানী জানাজা পড়িয়েছে।
জানাজার পূর্বে ছেলের যে বক্তব্য রাখার কথা সেটা রেখেছে। কিন্তু বাবুনগরীর দোসররা তার সে বক্তব্য সীমিত ও নির্ধারিত করে দিয়েছে।’
মোহাম্ম’দ মাঈন উদ্দীন দাবি করেন, আজকের সংবাদ সম্মেলনে আল্লামা আহম’দ শফীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ মাদানী উপস্থিতি থাকার কথা ছিল।
কিন্তু মামুনুল হক বাহিনীর কারণে তিনি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে পৌঁছাতে পারেননি। তাকে হাটহাজারী থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
যদিও সংবাদ সম্মেলন শুরুর ১০ মিনিট আগে হেফাজতের গত কমিটির যুগ্ম-মহাস’চিব মঈনুদ্দীন রুহী বলেন, ‘মাওলানা ইউসুফ মাদানী সম্মেলনস্থলের কাছাকাছি আছেন।’
অথচ আগে থেকেই প্রিন্ট করা সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে মাদানীকে আসতে বা’ধা দেওয়ার বি’ষয়টি উল্লেখ করা হয়। এ নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলেও তার সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি মাঈন উদ্দীন।
কয়েক দশক ধরে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসার মুহতামিম বা মহাপরিচালকের পদে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন শাহ আহম’দ শফী।
এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে তিনি বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা বোর্ড বা বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশেরও (বেফাক) সভাপতির দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। হেফাজতে ইসলাম নামে যে সংগঠন গড়ে ওঠে,
শুরু থেকে সেটির আমিরের দায়িত্বও তিনি ছিলেন। মূ’লত কওমী মাদরাসার নেতৃত্বের ও’পর ভর করেই আল্লামা শফী হেফাজতের দায়িত্বে ছিলেন।
আহম’দ শফীর উত্তরসূরী হওয়ার দ্ব’ন্দ্ব চলছিল মাদরাসার নায়েবে মুহতামিম বা সহকারী পরিচালক জুনায়েদ বাবুনগরী ও শফীর ছেলে আনাস মাদানীর মধ্যে। এর জেরে গত ১৭ জুন সহকারী পরিচালকের পদ হা’রান বাবুনগরী।
মাদরাসার কার্যক্রম শুরু হলে গত ১৫ সেপ্টেম্বর আকস্মিকভাবে মাদরাসার ভে’তর কয়েক হাজার শিক্ষার্থী বি’ক্ষো’ভ শুরু করে।
এ সময় প্রধান ফটক আ’টকে মাদরাসার মধ্যে ব্যাপক ভা’ঙচুর চা’লায় বি’ক্ষো’ভকারীরা।
এ ঘ’টনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর মাদরাসার শুরা কমিটি বৈঠকে আনাস মাদানীকে মাদরাসার সহকারী পরিচালকসহ সব পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। মুহতামিম আহম’দ শফী নিজে ‘পদত্যাগ’ করেন। ওইদিনই গু’রুতর অ’সুস্থ অবস্থায় শফীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। পরদিন ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মা’রা যান আহম’দ শফী।
আল্লামা শফীর মৃ’ত্যুর পর গত ১৫ নভেম্বর হেফাজতের সম্মেলন হয়। শফীপন্থীদের অংশগ্রহণ ছাড়া অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে হেফাজতের আমির নির্বাচিত হন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
মহাস’চিব নির্বাচিত হন আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী। এই কমিটিরই যুগ্ম-মহাস’চিব হন মাওলানা মামুনুল হক ও নাসির উদ্দিন মুনির। সম্প্রতি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মা’রা গেছেন নূর হোসাইন কাসেমী।
গত ১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের আ’দালতে হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির মাওলানা শাহ আহম’দ শফীকে হ’ত্যার অ’ভিযোগে নালিশি মা’মলা করেন তার শ্যালক মোহাম্ম’দ মাঈন উদ্দীন।
আ’দালত মা’মলাটি ত’দন্তের জন্য পু’লিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন। মা’মলায় হেফাজতের ৩৬ জন নেতাকর্মীকে আ’সামি করা হয়।
এর মধ্যে ভাস্কর্যের বি’রোধিতা করে আলোচনায় আসা হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাস’চিব মাওলানা মামুনুল হকও রয়েছেন।