শিমুল মিয়া, শাহিন মাতব্বর ও মহিদুল। তিন জনের বাড়ি ফরিদপুরের এক অজপাড়াগাঁয়ে। ওদের ব’য়স তিরিশের কোঠায়। পড়াশোনা দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত।
কিন্তু, প্রযুক্তি জ্ঞান কম্পিউটার প্রকৌশলীর মতোই। ঢাকায় কখনো স্থায়ীভাবে তারা বসবাস করেনি। কিন্তু প্র’তারণায় সিদ্ধহস্ত। গ্রামে বসেই সারা দেশে তৈরি করেছে প্র’তারণা নেটওয়ার্ক।
মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে বিকাশের মাধ্যমে প্র’তারণা করে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক কোটি টাকা। আর একের পর এক প্র’তারণা করে মানুষকে সর্বস্বান্ত করলেও কখনো ধরা পড়েনি পু’লিশের হাতে।
কিন্তু সর্বশেষ মহানগর গো’য়েন্দা পু’লিশের জালেই ধরা পড়তে হয়েছে এই তিন সদস্যকে।
বুধবার ভোরে রাজধানীর মোহাম্ম’দপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকা থেকে মহানগর গো’য়েন্দা পু’লিশের ওয়ারী টিম তাদেরকে গ্রে’ফতার করে।
বৃহস্পতিবার তাদেরকে রি’মান্ডে নিয়ে জি’জ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে মহানগর গো’য়েন্দা পু’লিশ। এ ত’থ্য জানিয়েছেন অ’ভিযান পরিচালনাকারী মহানগর গো’য়েন্দা পু’লিশের ওয়ারী বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. আফিকুল ইসলাম।
গ্রে’ফতারকৃতদের দেওয়া ত’থ্যের ভিত্তিতে গো’য়েন্দা শাখার ওয়ারী বিভাগের উপ-পু’লিশ কমিশনার আ. আহাদ বলেন, বিকাশ প্র’তারক চ’ক্রের সদস্যরা প্রধানত চারটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্র’তারণার কার্যক্রম সম্পন্ন করে থাকে।
প্রথম গ্রুপ মাঠ পর্যায়ে অবস্থান করে বিভিন্ন বিকাশের দোকানে টাকা বিকাশ করার কথা বলে অবস্থান নেয়।
একপর্যায়ে পূর্বে লেনদেনকৃত বিকাশ খাতার ছবি তুলে নেয় তারা। পরবর্তী সময়ে উক্ত ছবি হোয়াটসঅ্যাপ-এ দ্বিতীয় গ্রুপের কাছে স্থান উল্লেখ করে পাঠিয়ে দেয়।
দ্বিতীয় গ্রুপ তার কাছে পাঠানো বিকাশ খাতা থেকে প্রা’প্ত বিভিন্ন নম্বরে বিকাশ দোকানদার সেজে কল করে এবং জানতে চায় যে, তাদের কাছে পাঠানো টাকা তারা পেয়েছেন কি না এবং ক্যাশ আউট করেছেন কি না।
যদি বলে পেয়েছে কিন্তু টাকা তুলেনি বা ক্যাশ আউট করেনি তখন প্র’তারকরা তাদের প্র’তারণার বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার শুরু করে।
প্র’তারণার ছলে বলতে থাকে যে, আমার দোকান হতে একই সময়ে কয়েকটি নম্বরে পাঠানো টাকা নিয়ে অভিযোগ আসায় তাদের নম্বর লক করতে গিয়ে আপনার নম্বরও লক হয়ে গেছে। আপনাকে বিকাশ অফিস হতে ফোন করে আনলক করে দেবে।
অল্প সময়ের ব্যবধানে তৃতীয় গ্রুপ বিকাশ কাস্টমার কেয়ার সার্ভিস অফিসার পরিচয় দিয়ে, অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে বিকাশ অফিসের নাম্বার ক্লোনিং করে ফোন দেয়।
ফোন করে বিভিন্ন কথার ছলে ওটিপি এবং বিকাশ পিনকোড নিয়ে নেয়। পরবর্তী সময়ে গ্রাহকের বিকাশ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে
প্র’তারক চ’ক্র অ্যাকাউন্ট আনলক করার কথা বলে ভি’কটিমের বিকাশ অ্যাকাউন্ট এবং প্র’তারক চ’ক্রের বিকাশ অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন পরিমাণ টাকা দিতে বলে।
এইভাবে হাতিয়ে নেওয়া টাকা মাঠ পর্যায়ে থাকা সর্বশেষ অর্থাত্ চতুর্থ গ্রুপ এর কাছে পাঠানো হয়। যারা বিভিন্ন হাত বদল করে ক্যাশ আউট করে, ফলে প্র’তারকদের অবস্থান শনাক্ত করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
অ’ভিযান পরিচালনাকারী মহানগর গো’য়েন্দা পু’লিশের সহকারী কমিশনার মো. আফিকুল ইসলাম বলেন, গ্রে’ফতারকৃতদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ ত’থ্য পাওয়া গেছে। মা’মলার ত’দন্তের স্বার্থে তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন,
গ্রে’ফতারকৃতরা স্বীকার করেছে তাদের নেটওয়ার্ক সারা দেশ ব্যাপী। বিনা পুঁজিতে বিকাশের মাধ্যমে প্র’তারণা করে তা কয়েক বছরে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
প্র’তারণা টাকা সমান হারে চ’ক্রের সদস্যদের মধ্যে বণ্টন করা হয়। টাকা নেওয়ার জন্য ঢাকায় এসে তারা গো’য়েন্দা জালে ধরা পড়ে।
গো’য়েন্দা এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ফরিদপুর এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘিরেই এ চ’ক্রের প্রধান ঘাঁটি।
এখান থেকেই প্র’তারণা চ’ক্রের নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রিত হয়। এ চ’ক্রের অপর সদস্যদের গ্রে’ফতারে অ’ভিযান চা’লানো হচ্ছে। আশা করি দ্রু’ত তাদেরকে গ্রে’ফতার করা সম্ভব হবে।