বাংলাদেশে ধর্মীয় বিশ্বাসের পাশাপাশি কুসংস্কারচ্ছন্ন মানুষের অন্ধবিশ্বাসের বি’ষয়টি নতুন নয়। বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় বিভিন্ন আবি’ষ্কার আর চিকিৎসা বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবি’ষ্কার
এই অন্ধবিশ্বাস কমাতে সহায়তা করলেও এখনও গ্রাম বাংলায় রয়েছে কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের ব্যাপক প্রচলন। তেমনি এক অন্ধবিশ্বাস হলো আঁচল বিছিয়ে স’ন্তান লাভের আশায় ভিখ!
ভিখ মানে ভিক্ষা। ভক্তদের বিশ্বাস নিঃস’ন্তান বন্ধ্যা ম’হিলারা আশ্রমের অক্ষয় তলা নামক স্থানে বটগাছের নিচে সদ্যস্নান শেষে ভেজা কাপড়ে বসে আঁচল বিছিয়ে স’ন্তান লাভের জন্য ভিখ মাগবেন।
তাদের বিশ্বাস, যদি গাছের ফল বা পাতা আঁচলের ও’পর পড়ে তাহলে নিঃস’ন্তান না’রী স’ন্তান লাভ করবে। নাটোরের লালপুর উপজে’লার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের গোঁসাইজীর আশ্রমে এই দৃশ্য চলছে।
ঘ’টনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় ওই বটগাছের নিচে চারজন না’রী ভক্তি ভরে চাদর বিছিয়ে গাছ থেকে পাতা পড়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। আর তাদের কর্মকাণ্ড পেছনে ও পাশ থেকে দেখছেন অনেক না’রী-পুরু’ষ। আশ্রমের এক না’রী বৈষ্ণব তাদের দেখভাল করছেন।
প্রতিবছর দুদিনব্যাপী বাৎসরিক অনুষ্ঠানে এমন দৃশ্য দেখা যায়। এই দুদিনে আগত ভক্তদের কলাপাতায় করে প্রসাদস্বরূপ খিচুড়ি খাওয়ায় আশ্রম কর্তৃপক্ষ। আর আগতরা ভক্তি ভরে আশ্রমের দান বাক্সে তাদের মানতের টাকা দিয়ে যায়।
আশ্রম কমিটির সভাপতি শ্রী রঞ্জন কুমার ওরফে সঞ্জয় বি’ষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তবে এ ব্যাপারে নাটোর সিভিল সার্জন ডাক্তার মিজানুর রহমান জানান, এভাবে স’ন্তান অসম্ভব। এমন প্রার্থনা হচ্ছে কুসংস্কার। আর সেটাই গ্রামের কিছু মানুষের অন্ধবিশ্বাস। বৈজ্ঞানিক বা চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এর কোনও ভিত্তি নেই।
বিজ্ঞান সচেতন মহল বলেছেন, না’রী-পুরু’ষের দৈহিক সম্প’র্ক ছাড়া কারও ফু, মন্ত্র, গাছের পাতা, ফল এগুলোর দ্বারা স’ন্তান উৎপাদন হয় না। আবার শা’রীরিক নানা কারণে অনেক দম্পতির স’ন্তান নাও হতে পারে।
এর কারণ হতে পারে স্বা’মী বা স্ত্রী যে কোনও একজন বা উভ’য়েরই শা’রীরিক অ’সুস্থতা, ক্রোমোজমের গঠনে কোনও সমস্যা, দু’র্বলতা বা অন্য কোনও কিছু। এজন্য ফকির, সাধু, দরবেশদের পিছে না ঘুরে তাদের চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
তবে গ্রামের গরিব মানুষের অনেকেই আর্থিক সমস্যার কারণে হাসপাতালে না গিয়ে প্রার্থনা ও তাবিজ কবজ বা অলৌকিকতার ও’পরে নির্ভর করতে চায়।
অজ্ঞতা, অশিক্ষা এবং সস্তায় সমস্যার সমাধান পেতে চাওয়ার কারণে তারা এসব তথাকথিত পীর, ফকির, সাধু, সন্নাসী, কবিরাজ ইত্যাদির কবলে পড়ে এবং সর্বস্বান্ত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একজন না’রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, অনেক না’রী এসব বিশ্বাস করতে গিয়ে শা’রীরিক বা মা’নসিক নি’পীড়ন এমনকি ধ**র্ষণের মতো ঘ’টনারও শি’কার হন।
এরপর সামাজিক লোকলজ্জার ভ’য়ে তা চে’পে যান। এ ধরনের কর্মকাণ্ড আধুনিক যুগে প্র’তারণার শামিল। এগুলো বন্ধ করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরি।