রাত তিনটা। পু’লিশ সদস্যরা নৈশ কোচ এবং লং রুটের ট্রাকগুলোকে দাঁড় করাচ্ছেন একের পর এক। এরপর গাড়ি থেকে নামানো হচ্ছে চালক ও তার সহকারীকে।
বেশিরভাগ চালকই হয়তো এটাকে পু’লিশের চাঁ’দাবাজির নয়া কৌশল ভেবে বিভিন্ন অজুহাতে নামতে চাচ্ছেন না। কিন্তু পরে যখন দেখছেন কেটলি হাতে চা-কফি নিয়ে এগিয়ে আসছেন পু’লিশ সদস্যরা তখনই ভু’ল ভাঙে তাদের।
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং যানজট ও সড়ক দু’র্ঘ’টনা হ্রাস করতে গেলো বেশ কিছুদিন ধরেই চেষ্টা চা’লিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম জে’লা পু’লিশের সহকারী পু’লিশ সুপার (রাউজান-রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম।
এবার রাত্রিকালীন সড়ক দু’র্ঘ’টনার প্রধানতম কারণ চালকদের ঘুমঘুম চোখে গাড়ি চা’লানো বন্ধে তিনি চালু করলেন নতুন এক সচেতনতামূ’লক উদ্যোগ ‘রিফ্রেশমেন্ট কর্নার’।
নৈশ কোচ ও ট্রাক চালকদেরকে এই অস্থায়ী বিশ্রামাগারে থামিয়ে গরম পানিতে মুখ ধোয়া, চা-বিস্কুট খাওয়ানোর পাশাপাশি চোখে ঘুম জড়ানো অবস্থায় গাড়ি চা’লানোর বি’পদ সম্প’র্কে উপদেশ দিচ্ছেন সার্কেল এএসপি।
পু’লিশ সূত্রে জানা যায়, মূ’লত গেলো ১ মাস ধরেই উত্তর চট্টগ্রামের প্রা’ণখ্যাত চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক এবং চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট জুড়ে এই ব্যতিক্রমী কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার রাত তিনটার সময় এই প্রতিবেদক চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে গিয়ে দেখতে পান যে, রাউজান পাহাড়তলী বাজারসংলগ্ন এলাকায় রাস্তার পাশে তৈরি হয়েছে পু’লিশের এই বিশেষ অস্থায়ী বিশ্রামাগার।
গাড়ি থেকে নামানোর পর বেশ কিছুক্ষণ চালক ও সহকারীদের স’ঙ্গে গল্প করছেন সার্কেল এএসপিসহ অন্য পু’লিশ সদস্যরা।
ঝিমুনি প্রতিরোধে সেখানে রাখছেন হাত-মুখ ও ঘাড়ে পানি দিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থাও। তারপর ওয়ানটাইম কাপে চা-বিস্কুট খাইয়ে সাবধানে গাড়ি চা’লানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
এ প্রস’ঙ্গে এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, ‘শীতের রাতে গাড়ি চালাতে চালাতে অনেক চালকেরই চোখ বন্ধ হয়ে আসে। অসাবধানতায় প্রায়ই ঘটে যায় ছোট-বড় দু’র্ঘ’টনা।
এ প্রেক্ষিতে চালকদের সচেতন করার লক্ষ্যেই মূ’লত মুখ ধোয়ার জন্য গরম পানি এবং চা-বিস্কিটের ব্যবস্থা সহযোগে আমাদের এই রিফ্রেশমেন্ট কর্নার।
কিন্তু আমাদের পক্ষে তো সকল চালকের মুখোমুখি হওয়া বা সবার স’ঙ্গে কথা বলা সম্ভব নয়। তাই যাদেরকে পাচ্ছি তাদেরকেই অনুরোধ করছি তারা যেন তাদের সকল সহকর্মীর নিকট আমাদের বার্তটি পৌঁছে দেন।
এই গভীর রাতে চোখেমুখে পানি দেওয়ার পর হাতে গরম চা ও বিস্কুট পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই হাসি ফুটছে চালকদের মুখে। তারা জানান, এটা পু’লিশের খুবই ভালো উদ্যোগ। অনেক সময়ই ঘুম চলে আসে গাড়ি চা’লানোর সময়।
পু’লিশ যে আমাদের জন্য এতোটা ভাবছে এটা সত্যিই গর্বের ব্যাপার। দেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়কে স্থায়ীভাবে এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলেও মত তাদের।